বাগেরহাট প্রতিনিধিঃরামপালের পল্লী বিদ্যুত বিলের এপ্রিল মাসের বিলে ব্যাপক অসংগতির অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকদের দাবি প্রতিটি বিলে নিয়মিত বিলের থেকে দ্বিগুণ বিল বেশি করা হয়েছে। করোনায় খেটে খাওয়া মানুষ যখন এক বেলা খাবারের জন্য দিশেহারা ঠিক সেই সময়ে বাগেরহাট পল্লী বিদুৎ এর রামপাল শাখার এমন কান্ড জ্ঞানহীন অস্বাভাবিক বিল কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না বাগেরহাট পল্লী বিদুৎ এর হাজার হাজার গ্রাহকরা। যার দরুন আজ দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে অধিকাংশ গ্রাহক তাদের গত কয়েক মাসের বিলের কপি ও চলতি এপ্রিল মাসের বিলের কপির দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। সেখানে দেখাযায় প্রতিটি এপ্রিল মাসের বিলে ৪০০টাকা থেকে যে যেরকম বিদুৎ ব্যবহার করে তার সেই অনুপাতে দ্বিগুণ বিল এসেছে। এতে রামপাল জুড়ে এক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এবং দিন ভর ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনা হতে থাকে।
আনোয়ারুল কাদির সোহাগ নামে একজন গ্রাহক তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে গত মার্চ মাসের বিলের ছবি ও চলতি এপ্রিল মাসের বিলের ছবি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ফেসবুকের পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
করোনা ভাইরাস এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পৌষ মাস
কথায় বলে “কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ” – এটাই যেন আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। করোনা ভাইরাসের কারনে সমগ্র পৃথিবী যখন অচল, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো যখন কর্মহীন হয়ে গৃহবন্দি অবস্থায় ভাবতে বসেছে আসলে তারা কি করোনায় মারা যেতে বসেছে নাকি অনাহারে! সকল ব্যাংক ও NGO যখন লোনের কিস্তি নেওয়া স্থগিত করেছে,
গান্ধীগাঁও গ্রামের ভিক্ষুক নজিমুদ্দিন যখন ভিক্ষাবৃত্তি করে ঘর নির্মানের জন্য ২ বছরের জমানো অর্থ (দশ হাজার টাকা) দান করে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহি অফিসারের করোনা তহবিলে ঠিক এমনই একটি সময়কে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের বিল বাণিজ্যের একটি আদর্শ সময় মনে করছে।
করোনা আতঙ্কে যুক্তি সংগত কারণে মিটার রিডিং না দেখেই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল তৈরি করেছেন তারা। যেহেতু মিটার না দেখেই বিল প্রস্তুত করতে হবে- তো আর কম করে কি লাভ! সুযোগ বুঝে গত মাসের দ্বিগুণেরও একটু বেশি টাকা ধার্য করে এক মনগড়া ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল তৈরি করে ছেড়ে দিয়েছেন।
সমস্যা কোথায়! দেখার তো কেউ নেই।
আমি নিজেও বিষয়টি নিয়ে প্রথমে গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু বিল হাতে পাবার পরে গত দুই দিনে আমার আশেপাশের অনেক প্রতিবেশী একই অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এসেছেন। তাদের সকলের বিদ্যুৎ বিল এ মাসে গত মাসের দ্বিগুণেরও বেশি এসেছে।কি করবে তারা??
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সেবার মান নিয়ে আর কি বলব! পবিত্র রমজান মাসে ইফতার, মাগরিবের নামাজ, তারাবীহ নামায, এমন কি অনেক সময় সেহরি ও খেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকারে। শুনেছি আমাদের রামপাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কোন এক কর্মকর্তা নাকি এভাবেই বিদ্যুৎ অপচয় না করার জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
কি হবে এসব বলে? নচিকেতার “আমি অন্ধের দেশে চশমা বিক্রি করি” গানটির মতো হবে নাতো?
স্টাটাসটি ফেসবুকে আপলোড হওয়ার পরপরই সেখানে শতাধিক গ্রহক মন্তব্য করেন এবং তাদের বিলে ও এই অসংগতির কথা জানান।
মাজেদুর জুয়েল নামে একজন মন্তব্য করেনঃ দেখার কেউ নেইতো এখানে, অযথা লোডশেডিং,, মেঘ আসার আগেই বিদ্যুৎ যায় আসে ৩/৪ ঘন্টা পর।। ঝড়নেই বাতাস নেই হুদাহুদি আকাম।। আমরাতো সব পশুর নদীদিয়ে ভেসে এসেছি আবার ভেসে চলে যাব,,, আমাদের জন্য কেউ কথা বলে না সব পুতুল।
সান্তানু সরকার নামে একজন মন্তব্য করেছেনঃ ভাইজান, আমাদের বাড়ির বিল, গত মাসের ৩ গুণ। আসলে বিষয়টা খুবই দুঃখ জনক।
মোঃ শরীফ নামে একজন মন্তব্য করেনঃ আজ প্রায় ৫ মাস আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন তারপর ও প্রতি মাসে বিল হচ্ছে।এমাসে তার প্রায় দ্বিগুন বিল তৈরি করে ফোনে এসএমএস পাঠাইছে।
কামরুজ্জামান পলাশ নামে একজন গ্রাহক তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে গত মার্চ মাসের ও চলতি এপ্রিল মাসের বিলের ছবি দিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
তার স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ মিটার রিডিং না দেখে ভৌতিক বিল করলো বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।এরা কি আইনের উদ্ধে।প্রতি মিটারে দুই চারশো থেকে যে যেমন ব্যাবহার করে তত বেশি বিল করেছে।এ ব্যাপারে কার দৃষ্টি আকর্ষন করবো।বিঃ দ্রঃ এপ্রিল মাসের বিল।
এই স্টাটাসটি ও আপলোড হওয়ার পরপরই কমেন্ট বক্সে সাধারন গ্রাহকরা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
শিবলু আকুঞ্জি নামে একজন মন্তব্য করেনঃ কিসের করোনা, দুর্নীতি বাজরা দুর্নীতি ছাড়েনা এরি মাঝেইতো বেচে আছি দোস্তো। বাজারও অনিয়ন্ত্রিত কি আর করা
হিমেল রাব্বি সোহান নামে একজন মন্তব্য করেনঃ এমনিই ইফতারি সাহরি তারাবিতে থাকে না তারপর আবার ধান্দাবাজি
গ্রাহকদের অভিযোগের ভিওিতে রামপাল পল্লী বিদুৎ এর ডিজিএম মোঃ এমদাদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সকল গ্রাহকের ঘরে ঘরে গিয়ে বিল করা সম্ভব হয়নি, যে কারনে অনেকটা অনুমানরন উপর বিল করা হয়েছে। যে কারনে কারো কারো বিল গতমাসের তুলনায় কম বা বেশি হয়েছে। তবে যে সকল গ্রাহকের বিল বেশি এসেছে তাদেরকে রামপাল বিদুৎ অফিসে (ভাগা অফিস) এসে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বিল সংশোধন করে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছ। এবং এই বিল পরবর্তী মাসের বিলের সাথে ও সমন্নয় করা হবে বলে জানান তিনি।